admin
July 4, 2024
ডেস্ক রিপোর্ট: নামটা ছিলো অনেক লম্বা। ডাক নাম ছিলো ববি। নবম শ্রেণিতে রেজিস্ট্রেশনের সময় গুলজার স্যার খ্যাচ খ্যাচ করে নামের কিছু অংশ কেটে ফেললেন। মা বাবার দেওয়া নামের এই অবস্থা দেখে চোখ ছল ছল করে উঠেছিল ববির, কিন্তু স্যারকে কিছু বলতে পারেনি। মাথায় হাত দিয়ে সান্ত্বনা দিয়েছিলেন স্যার। বলেছিলেন, ‘আধুনিক কালে এত বড় নাম চলে না। তোরা আধুনিক কালের ছেলে। তোদের আরও স্মার্ট হতে হবে’। ডিকশনারির পাতা খুঁজে স্মার্ট শব্দটির অর্থ বের করে নিয়েছিল ববি। তারপর মনের কষ্টটা অনেকটা কমে গিয়েছিল। সময়ের সঙ্গে সার্টিফিকেটের সেই নামটিও হারিয়ে গেছে। সেই নামে কেউ তাকে আর চেনে না। পরিচিত হয়েছেন ববি চৌধুরী নামেই। দেশ ছেড়েছেন ১৯৯০ সালে। স্কলারশিপ নিয়ে পিএইচডি করতে অস্ট্রেলিয়ায় এলেন। পরিচয় হওয়ার প্রথম দিনই সুপারভাইজার চা খেতে খেতে বললেন, ‘ণড়ঁৎ হধসব রং :ড়ড় ষড়হম, পধহ ও পধষষ ুড়ঁ রহ ধ ংযড়ৎঃ হধসব?’ ববি সঙ্গে সঙ্গেই রাজি হয়েছিল। ণবং, ুড়ঁ পধহ পধষষ সব ইড়নু ঈযড়ঁফযঁৎু’ ইড়নু রং সু হরপশ সধসব. সুপারভাইজার যেনো আরও পেয়ে বসলো। ও রিষষ পধষষ ুড়ঁ ইড়ন. পিএইচডি সুপারভাইজার বলে কথা। প্রবাসের বাঁচা-মরা এখন সম্পূর্ণটাই তার হাতে। রাজি হয়েছিল ববি। গুলজার স্যারের কথা খুব মনে পড়ছিল তখন। প্রথম প্রথম বব নামে কেউ ডাকলে বিভ্রান্ত হয়ে যেতেন। আমাকে ডাকছে কি! কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বব নামেই অভ্যস্ত হয়ে উঠছেন। প্রবাসের মাটিতে বাংলায় কথা বলার জন্য মন আঁকুপাঁকু করে। কেউ কোনো বাঙালি পরিবারের খোঁজ দিতে পারে না। দেশে মা বাবার সঙ্গে ফোনে কথা বলা ছাড়া বাংলায় কথা বলার কোনো সুযোগ নেই। প্রথম বাঙালি কারও সঙ্গে পরিচয় হয়েছিল তিন বছর পর। প্রকাশ রায়ের সঙ্গে। হাত বাড়িয়ে হ্যান্ডশেক করতে করতে নিজের পরিচয় দিয়েছিলেন বব। পরপরই সংশোধন করে বলেছিলেন, ববি চৌধুরী। সেদিনই প্রথম বুঝতে পেরেছিলেন, বব নামেই তিনি বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছেন। বব নামের ইতিবৃত্ত বলেছিলেন প্রকাশ রায়ের কাছে। পরিচয়ের কয়েকদিন পর সাপ্তাহিক ছুটির দিন ডিনারের নিমন্ত্রণ পেয়েছিলেন প্রকাশ রায়ের কাছ থেকে। মনের মধ্যে এক ধরনের উত্তেজনা কাজ করছিল। সন্ধ্যার আগেই পৌঁছে গিয়েছিলেন সেখানে। পরিচয় হয়েছিল আরও কয়েকটি বাঙালি পরিবারের সঙ্গে। অনেকদিন পর মন খুলে কথা বলতে পেরেছিলেন। দুই দশকে বাঙালি প্রবাসীর সংখ্যা বেড়েছে অনেক। সেই সঙ্গে নিমন্ত্রণের সংখ্যাও বেড়েছে অনেক। এখন নিমন্ত্রণ যেনো শাঁখের করাত। পরিচিত কেউ নিমন্ত্রণ না করলে মনে মনে কষ্ট পায়, আমাকে সম্মান করলো না। আবার নিমন্ত্রণ করলে সপ্তাহান্তের সব কাজ শেষ করে অংশ নিতে নাভিশ্বাস উঠে যায়। কোনো কোনো সপ্তাহে চারটি নিমন্ত্রণও থাকে। যে সপ্তাহে চারটি নিমন্ত্রণ থাকে সে সপ্তাহে নিমন্ত্রণ বিনোদন না হয়ে বেদনায় রূপ নেয়। তারপরও নিমন্ত্রণই এখানে মন খুলে কথা বলার জায়গা। বাংলাদেশে যেখানে চায়ের কাপে ঝড় উঠত কোনো রেস্টুরেন্ট অথবা গলির মোড়ে চায়ের দোকানে, এখানে সেই ঝড় ওঠে ছুটির দিনে সামাজিক নিমন্ত্রণে। দেশের চলমান রাজনৈতিক অবস্থা নিমন্ত্রণের আড্ডায় প্রধান আলোচনার বিষয়। দেশ ছেড়ে আসার সময় দেশে চলছিল তুমুল আন্দোলন। মিটিং মিছিল আর ধর্মঘট। এরশাদকে পদত্যাগ করতে হবে। লোকে প্রথম প্রথম বলতো, ‘জনগণ ভোট দিলো ড. কামাল হোসেনকে, নির্বাচনে জিতলো সাত্তার আর ক্ষমতায় এলো এরশাদ’। নয় বছর ক্ষমতায়। এরশাদের পদত্যাগের দাবি দেশের সব রাজনৈতিক দল একাট্টা। অনির্দিষ্ট কালের ধর্মঘট চলছিল। রাজপথে রিকশা ছাড়া আর কোনো যান চলে না। এয়ারপোর্টে যাওয়ার জন্য অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করেছিলেন। প্রবাসের প্রথম দিনগুলো শূন্যতা অনুভব করতেন দৈনন্দিন খবরের। ঢাকার দিনগুলো শুরম্ন হতো খবরের কাগজ পড়া দিয়ে। অফিসে ঢুকে প্রথমেই চোখ বুলিয়ে নিতেন দৈনিক ইত্তেফাকের প্রথম পাতা। আর রাতে এসে বিছানায় শুয়ে সংবাদ না পড়লে ঘুমই আসতো না। প্রবাসের প্রথম কিছুদিন খবরের কাগজের শূন্যতা অনুভব করেছেন। অনলাইনে ইংরেজি খবরের কাগজের মধ্যে শূন্যতা পূরণের চেস্টা করেছেন অনেক দিন। তন্ন তন্ন করে খুঁজতেন বাংলাদেশের কোনো খবর। কয়েকদিন পর অনলাইন সংবাদ পত্রে এক কলামের খবর পেয়েছিলেন ঊঢ চৎবংরফবহঃ ড়ভ ইধহমষধফবংয ঊৎংযধফ ংবহফ :ড় লধরষ. ছাত্রজীবন থেকেই ববের ছিলো রাজনীতির প্রতি ঝোঁক। এরশাদ সরকারের সময় যে মিছিলে পিছন থেকে ট্রাক তুলে দিয়ে পাঁচজন ছাত্রকে হত্যা করেছিল, সেই মিছিলের একজন ছিলো ববি। চাকরির সময়ও রাজনৈতিক মিছিল মিটিংয়ে তার উপস্থিতি ছিলো নিয়মিত। বিশ বছরে উন্নতি হয়েছে অনকে। এখন দেশের খবর জানার জন্য কত মাধ্যম। স্যাটালাইট চ্যানেল, অনলাইন নিউজ পোর্টাল, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম- আরও কতোকিছু। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর থেকেই রাজনৈতিক খবরের দিকে ছিলো তার ঝোঁক সবচেয়ে বেশি। প্রবাসের শুরম্নর দিনগুলোতে ছিলো খবর না জানার কষ্ট। আর এখন জেনেও কিছু করতে না পারার কষ্ট। পরিচয়ের পর থেকে আজ পর্যন্ত প্রকাশ রায়ের সঙ্গে সম্পর্ক এখনও অটুট। আজকের নিমন্ত্রণটাও প্রকাশ রায়ের বাড়িতে। অতিথি সবাই এক অপরের পরিচিত। ছেলেদের আড্ডা থিয়েটার রম্নমে আর মেয়েরা বসেছে লিভিং রম্নমে। লিভিং এরিয়ায় বড় ডাইনিং টেবিলে খাবারগুলো সাজানো। ব্যাঞ্জনের সংখ্যাও অনেক। এখনও অতিথি দুই একজন আসার বাকি রয়েছে। ছেলেরা পেস্নট হাতে লাইনে যে যার ইচ্ছে খাবার তুলে নিচ্ছে। এখানে নিমন্ত্রণে বুফে সিস্টেম। মায়েরা বাচ্চাদের খাইয়ে দিচ্ছেন। রিমি ভাবির বাচ্চা ঝাল খেতে পারে না। ছেলেকে খাওয়ানোর আগে ভর্তার ঝাল পরীক্ষা করতে আঙুলের মাথা দিয়ে একটু পরীক্ষা করে দেখলেন কেমন হয়েছে। ঝাল বেশি বাচ্চা খেতে পারবে না। তবে স্বাদ হয়েছে সুন্দর। সরিষার তেলের ঝাঁজ। রায় বৌদি পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। রিমি ভাবি ডেকে বললেন বৌদি আপনার ভর্তার স্বাদ যা হয়েছে না, এক্সিলেন্ট! রায় বৌদির গদ গদ উত্তর, থ্যাঙ্ক ইউ ভাবি। বৌদি রেসিপিটা একটু বলবেন। রিমি ভাবি জিজ্ঞেস করলেন। বৌদি আরও খুশি। না ভাবি, তেমন কিছু না। পিয়াজ ফ্লেক করে নিয়েছি। শুকনা মরিচ ভাজা আর খাঁটি সরিষার তেল। তবে তেলটা বাংলাদেশ থেকে এনেছি। এতো সুন্দর তেল কোথায় পেলেন বৌদি? রিমি ভাবি জানতে চায়। রায় বৌদি ডিসপসিবল গস্নাসের প্যাকেটগুলো খুলতে খলতে উত্তর দেয়, এটা আমার দেবরের শ্বশুরের মিলের তেল। আমাকে স্পেশাল করে ভাঙিয়ে দিয়েছে ভাবি। জানেন ভাবি, দাম নেয়নি। কত অনুরোধ করলাম কিছুতেই নিলো না। বলে কী জানেন ভাবি, আমার ঘানীর তেল অস্ট্রেলিয়া যাচ্ছে, এটা যে আমার সৌভাগ্য। বড় পাওয়া। দাম দিয়ে আমাকে লজ্জা দেবেন না। পাশের থেকে কেউ একজন বলে ওঠে, তবে যাই বলেন, সরিষার তেলের উপর কোনো তেল হয় না। আমাদের বাঙালিদের সরিষার তেল ছাড়া চলে না। ভর্তা আর ভাজিতে সরিষার তেলের জুড়ি নেই। রিমি ভাবি উত্তর দেয়, তেল কিন্তু ভাবি শুধু রান্নার কাজে লাগে না, সুবিধা আদায়েও কাজে লাগে, উপরে উঠতেও কাজে লাগে। ইকবাল সাহেব ডিসপসিবল পেস্নট হাতে লাইনে। কানটা চলে গিয়েছে মহিলাদের আলোচনার মধ্যে। সেদিকে তাকাতেই চোখে চোখ পড়ে যায় রিমি ভাবির দিকে। রিমি ভাবিকে উদ্দেশ্য করে বলে ওঠেন, তেল কিন্তু দ্রম্নত উপরে উঠতে বাধা হয়েও দাঁড়ায়। তৈলাক্ত বাঁশের অঙ্ক করেননি? প্রথম লাফে তিন ফুট ওঠে, এক ফুট নামে। ইকবাল ভাইয়ের কথা শুনে মেয়েরা সবাই একসঙ্গে হেসে ওঠে। অন্যদিকে, আরেক রম্নমে চলছে তুমুল রাজনৈতিক বিতর্ক। হেনা সাহেব বলছেন, পাঁচ জানুয়ারির ওটা কী কোনো নির্বাচন হলো। একতরফা নির্বাচন। কেউ অংশ নেয়নি। হেনা সাহেব বিএনপি’র ঘোর সমর্থক। দেশে থাকতে কোনো একটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের জিএস ছিলেন। সুযোগ পেলেই দেশের রাজনীতির কথা তোলেন। প্রবাসে বাঙালিদের আড্ডায় রাজনীতির আলোচনা না হলে সবকিছুই যেনো পানসে মনে হয়। নান্নু সাহেব পাশ থেকে বলে ওঠেন, সরকার কী আপনার দলকে নির্বাচনে অংশ নিতে বাধা দিয়েছে? আপনারাই অংশ নেননি। আপনারা নেবেন না, আবার বলবেন একতরফা নির্বাচন। হেনা সাহেব রেগে অস্থির। সরকার তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করলো কেন। নান্নু সাহেবের এবার সহাস্য উত্তর, আপনারা ঠেকাতে পারেননি কেন। হেনা সাহেবের গরম জবাব, আপনারাই তো দাবি তুলেছিলেন, আন্দোলন করেছিলেন। বিএনপি সরকার সেটা সংসদে পাশ করেছিল। আওয়ামী লীগের লজ্জা করে না সেটা বন্ধ করতে। নান্নু সাহেব মাংসের রানটা কামড়াতে কামড়াতে বললেন, হ, তত্ত্বাবধায়ক সরকার হলে আপনাদের ভালো হয়। আপনারা ইয়েসউদ্দিন ইয়েসউদ্দিন খেলতে পারেন। বিতর্ক যখন তুঙ্গে, শিবলি সাহেব মাঝখান থেকে বলেন- আমি একখান কথা বলি। হেনা সাহেব এবার বলেন, আপনি আর কী বলবেন, আপনিও তো সরকারি দলের লোক। শিবলি সাহেব উত্তর দেন, হ, সেজন্যই তো বলবো। পাশ থেকে অন্য শ্রোতারা অনুরোধ করেন, বলেন বলেন। শিবলি সাহেব বলেন, কথাটা হলো, আপনারা যখন ক্ষমতায় ছিলেন আপনারা আপনাদের ক্ষমতা দেখাইছেন, এখন আমরা ক্ষমতায় আমরা আমাদের ক্ষমতা দেখাচ্ছি। আলোচনা শেষ। চলেন ডেজার্ড নিয়ে আসি। কেউ একজন বলে উঠলো, সঠিক কথা বলেছেন। একে একে উঠে সবাই চলে যায় ডেজার্ড আনতে। সময় গড়িয়ে রাত এগারোটা। অনেকেই চলে গিয়েছেন বিদায় নিয়ে। ফায়ার পেস্নসের পাশে এক গ্রম্নপ তাসের আড্ডায়। বব চৌধুরীও তাসের আড্ডার একজন। এসেছেন সেই নর্থ থেকে। সেখানেও বেশকয়েকজন বাঙালি পরিবার বাস করে। তাদেরকে সবাই বলে উত্তরাবাসী। তাকে গাড়ি চালিয়ে যেতে হবে প্রায় ষাট কিলোমিটার। তাকে একটু আগে উঠতে হবে। রায় বৌদি এসে অনুরোধ করেন, ভাই একটু চা খেয়ে যান। দূরে গাড়ি চালিয়ে যাবেন। বব মনে মনে ভাবেন, মন্দ নয়। গাড়ি চালানোর জন্য ভালো হবে। চা খেয়ে উঠতে উঠতে রাত বারোটা। তাসের আসর ভেঙে যায়। বব চৌধুরী রওনা দেন বাড়ীর উদ্দেশে। গাড়ি চালিয়ে বাড়ি পৌঁছাতে রাত প্রায় বারোটা। সন্ধ্যার পর থেকে টেলিভিশন দেখার সুযোগ হয়নি। মনের মধ্যে দেশের খবর জানার আকাঙ্ক্ষা তীব্র। আবার কী দুঃসংবাদ রয়েছে কে জানে। দেখলে মন খারাপ হয়ে যায়। না দেখলে ভালো লাগে না। দুই মাস ধরে অবরোধ চলেছে। কোনো ফল হয়নি। অবোরোধও চলছে, গাড়ি-ঘোড়াও চলছে। মাঝখান দিয়ে শেষ হয়ে গেছে কিছু মানুষের জীবন। টেলিভিশনের রিমোর্ট হাতে নিতেই বউ বলে উঠলো, এখন আর টিভি চালিও না পিস্নজ। বাচ্চাদের ঘুম ভেঙে যাবে। আজ রাতের নিমন্ত্রণে খাওয়াটা একটু বেশিই হয়ে গেছে বব চৌধুরীর। আড্ডার সঙ্গে খাওয়া। সঙ্গে ছিলো নানা পদের ভর্তা। মনে হলো, পেটে একটু গ্যাস হয়েছে। টলবয়ের উপর থেকে এক চিমটি ভাস্কর লবন মুখে দিয়ে শুয়ে পড়েন। সাধনা ঔষধালয়ের এই ভাস্কর লবন তার ভালো কাজ করে। ঘুমিয়ে পড়লেন সঙ্গে সঙ্গে আর প্রবেশ করলে স্বপ্নের জগতে। ফাঁকা রাস্তায় বাস চালাচ্ছিলেন বব চৌধুরী। যাত্রী বোঝাই বাস। কিছুক্ষণ পর তিনি বুঝতে পারলেন রাস্তাটি তার অচেনা এবং বাসটি চলছে উল্টো পথে। সঙ্গে সঙ্গে একটা আতঙ্ক বুকের মধ্যে চাড়া দিয়ে উঠলো। প্রথম ভয় মুখোমুখি সংঘর্ষ, আরেক ভয় পুলিশের কেস। ভিতরের যাত্রীরা নির্লিপ্ত। কারও কোনো মাথা ব্যথা নেই। উল্টো রাস্তায় প্রথমেই মুখোমুখী যাত্রী রিকশার। কোনোমতে সাইড দিয়ে সংঘর্ষটা এড়ানো গেলো। বব চৌধুরী এবার মনে মনে ভাবলেন, এবার মূল লেনে ফেরা যাক। কিন্তু সেখানেও বিপত্তি। বিশাল ডিভাইডার। ওদিকে শোনা যাচ্ছে পুলিশের সাইরেন। বব সিদ্ধান্ত নিলেন, যে করেই হোক সঠিক লেনে ফিরতে হবে। একটু সামনেই মনে হলো ডিভাইডারটা নিচু। স্টিয়ারিং বাম দিকে ঘুরিয়ে তুলে দিলেন ডিভাইডারের উপর। বিশাল এক ঝাঁকি খেয়ে বাসটি এসে পড়ল বাম পাশের ডান লেনে। বব চৌধুরী খেয়ালই করেননি যে ডান লেন দিয়ে কোনো গাড়ি আসছে। শুনতে পেলেন লম্বা একটা হর্ন। ব্যাক ভিউ মিরর দিয়ে দেখতে পেলেন দ্রম্নতগামী একটা ট্রাক এসে হার্ড ব্রেক করে দাঁড়িয়ে পড়েছে। বিপজ্জনক সাইরেন বাজাচ্ছে পুলিশের গাড়ি। রাস্তাটি অচেনা। সামনে গিয়ে রাস্তাটির তিনটি শাখা বেরিয়ে গেছে। ডান পাশেরটা পাহাড়ি ঢালের মতো। মনে হলো পিচ্ছিল। উপরে ব্রিজ। মাঝেরটি বন্ধ। দুই রাস্তার মাঝ দিয়ে দেখা যাচ্ছে বিশাল জলাশয়। কচুরিপানায় ভরা। বামের রাস্তাটি ইট বসানো। কিছু না ভেবে বব চৌধুরী গাড়ি তুলে দিলেন বাম পাশের ইট বসানো রাস্তায়। মনে হলো এটাই নিরাপদ। একটু পরে রাস্তাটি ডানে টার্ন করে চলে গেছে ব্রিজের নিচে। পুলিশের গাড়ির সাইরেন বন্ধ হয়ে গেছে। বব চৌধুরীর মনে হলো অন্তত একটি বিপদ থেকে বাঁচা গেলো। মনে হলো হয়তো এই রাস্তা ধরেই এগিয়ে যেতে পারবেন। আর একটু এগিয়ে রাস্তাটি চলে গেছে কচুরিপানার নিচে। আস্তে আস্তে বাম দিকে ঢালু হয়ে গেছে রাস্তাটি। যাত্রীদের কোনো ভ্রম্নক্ষেপ নেই। গাড়ি নিয়ে এগিয়ে গেলো আরও কয়েক মিটার। তারপর মনে হলো, না, আর যাওয়া ঠিক হবে না। বাসটি উল্টে যাওয়ার সম্ভবনা তৈরি হয়েছে। স্টার্ট বন্ধ করে বাস থেকে নেমে পড়লো বব। খাড়া ঢাল। পিচ্ছিল শ্যাওলা পরা রাস্তায় দাঁড়ানো যাচ্ছে না। বামদিকে কাত হয়ে পড়েছে বাসটি। বাসের যাত্রীরা কেউই নামছে না। বব চৌধুরী মনে মনে ভাবলেন, ধাক্কা দিয়ে বাসটিকে পিছনে একটু নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাই। দরজার দু’পাশের হাতল ধরে দু’টো ঝাঁকুনি দিলেন বব। বাসটি নড়ছে না। বব একা। ঝাঁকুনিতে ঘুম ভেঙে গেলো ববের। বুকের মধ্যে মহা প্রশান্তি। এগুলো সত্য নয়। স্বপ্ন দেখছিলেন। চোখ মেলে তাকিয়ে দেখলেন সূর্য উঠে গেছে। পর্দার মাঝ দিয়ে ঘরে ঢুকছে আলো। কাজে বেরোতে হবে। রোববার, আজ অফিস নেই। বব চৌধুরী টিভিটা অন করে দিয়ে কফি বানাতে লাগলেন। খবর চলছে। নিচে স্ক্রলে লেখা ভেসে উঠছে, বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন আহম্মেদকে গ্রেফতার করেছে মেঘালয় পুলিশ। উপরে বিএনপি’র গতকাল বিকেলের প্রেস কনফারেন্সের ক্লিপ। বিএনপি নেতা আসাদুজ্জামান রিপন বলেছেন, বিএনপি নতুন করে শুরম্ন করতে চায়। বব চৌধুরী কফির কাপ হাতে নিয়ে গেলেন পিছনের সবজি বাগানে। যেখানে ফুটে রয়েছে হলুদ রঙের অনেকগুলো কুমড়ো ফুল।
সুত্র:এফএনএস ডটকম
ডেস্ক রিপোর্ট : অবিশ্বাস্য—সাম্প্রতিক সময়ে ম্যানচেস্টার সিটির প্রতিটি ম্যাচ শেষে এই শব্দটি যেন ঘুরেফিরে বারবার লিখতে হচ্ছে। ইউরোপের অন্যতম প্রভাবশালী
ডেস্ক রিপোর্ট : ‘আজ কি রাত মজা হুসনো কি’, ‘স্ত্রী-২’ সিনেমার গানের সঙ্গে নতুন এক তামান্না ভাটিয়াকে আবিষ্কার করেছিলেন সিনেজগতের
ডেস্ক রিপোর্ট : সবার জন্য মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে বা শিক্ষার মানোন্নয়নে শাসকশ্রেণির কোনো ভূমিকা দেখছেন না অধ্যাপক রেহমান সোবহান।
ডেস্ক রিপোর্ট : নিউইয়র্কে বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেলে ১৮ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস-২০২৪” ও “জাতীয় প্রবাসী দিবস-২০২৪ “ উদ্যাপন করা হয়।
ডেস্ক রিপোর্ট : বাশার আল-আসাদ সরকারের পতনের পর এখন পর্যন্ত সিরিয়ায় পাঁচ শতাধিক হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। দেশটির সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে বিমান
ডেস্ক রিপোর্ট : মার্কিন গায়িকা ও অভিনেত্রী সেলেনা গোমেজ ব্যক্তিজীবন নিয়ে সবসময় আলোচনায় থাকেন। সম্প্রতি প্রেমিক বেনির সঙ্গে বাগদানের খবর
ডেস্ক রিপোর্ট : ইন্টার কন্টিনেন্টাল কাপের প্রথম আসরের শিরোপা জিতেছে রিয়াল মাদ্রিদ। এর মধ্য দিয়ে দারুণ এক অর্জন সঙ্গী হয়েছে
ডেস্ক রিপোর্ট : লেখালেখি একটি আর্ট, একটি নান্দনিক শিল্প। কুরআন ও হাদিসের দৃষ্টিতে লেখনীর গুরুত্ব অপরিসীম। লিখতে হয় কলম দিয়ে।