এসির বাতাসে শিশুকে নিরাপদ রাখবেন যেভাবে
ডেস্ক রিপোর্ট : উষ্ণ মৌসুমের ভয়াবহ উত্তাপ থেকে স্বস্তির জন্য এখন একটি অপরিহার্য গৃহস্থালি যন্ত্র এসি (এয়ার কন্ডিশনার) বা এয়ার কুলার। এটি শিশু-বৃদ্ধ নির্বিশেষে সবার জন্য প্রযোজ্য হলেও শিশুদের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন প্রয়োজন। শিশুদের প্রাথমিক শারীরতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য পরিবেশের যে কোনো প্রতিক্রিয়ার জন্য পূর্ণাঙ্গভাবে প্রস্তুত নয়। যার ফলশ্রুতিতে দীর্ঘক্ষণ যাবত ঠান্ডা ও শুষ্ক আবহাওয়ায় শিশুদের স্বাস্থ্যঝুঁকি দেখা দিতে পারে। তাই এসি ব্যবহারের সময় সার্বিক দিক থেকে তাদের আরামপ্রদ পরিবেশ ও নিরাপত্তা বজায় রাখা জরুরি। চলুন, এসিতে শিশুর স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ ও তা থেকে বাঁচতে করণীয়গুলো সম্বন্ধে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
এসির বাতাসে শিশুদের ঠান্ডা লেগে যায় কেন?
এসি থেকে নির্গত জীবাণু (ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাস)
শিশুর স্বাস্থ্যের জন্য এসির সবচেয়ে গুরুতর বিষয়টি হচ্ছে এর বাতাসের সঙ্গে নির্গত জীবাণু। বিশেষত সময়মতো পরিষ্কার করা না হলে এসির বাতাস রীতিমতো বিষাক্ত হয়ে যায়। কারণ দীর্ঘদিন নোংরা থাকা এসিতে ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস ও ফাঙ্গাস জন্ম নেয়। এই জীবাণুগুলো বাতাসে সঞ্চালিত হয়ে শিশুদের দেহে প্রবেশ করে। এর ফলে শিশুদের নানা ধরনের বায়ুবাহিত রোগে সংক্রামিত হওয়ার আশঙ্কা বাড়ে।
শিশুর দুর্বল শারীরিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা
এসি থেকে ক্রমাগত ঠান্ডা বাতাসে প্রাপ্তবয়স্কদের মতো শিশুরা অভ্যস্ত হতে পারে না। এ মূল কারণ হচ্ছে এমন পরিবেশের জন্য শিশুদের শারীরিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এখনও পরিপক্ক নয়। ভয়ের বিষয় হচ্ছে- এসির শীতলতার সঙ্গে অভ্যস্ত হওয়ার পরিবর্তে তাদের শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা উল্টো বরং কমে যেতে পারে। এটি ক্রমশ তাদের স্বাভাবিক প্রতিরক্ষাকে দুর্বল করে বিধায় তারা সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত হয়।
আরো পড়ুন: এয়ার কন্ডিশনার ছাড়াই গরমে ঘর ঠান্ডা রাখার কার্যকরী উপায়
তাপমাত্রার আকস্মিক ওঠানামা
অনেকটা সময় এসি রুমে থাকার পর হঠাৎ সেখান থেকে বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাইরের গরম বাতাস রীতিমত হামলে পড়ে। এরকম দ্বৈত আবহাওয়া শিশুদের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলে। বিষয়টি বাইরের প্রাকৃতিক পরিবেশ থেকে এসি রুমে প্রবেশের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। তাপমাত্রার এই আকস্মিক ওঠা-নামা শিশুর শরীরকে সর্দি-কাশিসহ অন্যান্য অসুস্থতার জন্য আরও সংবেদনশীল করে তোলে।
এসির বাতাসের ফলে সৃষ্ট শুষ্কতা
এয়ার কুলার ও এসির শুষ্ক বাতাস ঘরের আর্দ্রতাকে আশঙ্কাজনক হারে কমিয়ে দেয়। এই শুষ্কতা সরাসরি শিশুর নাসারন্ধ্র ও গলাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। বিভিন্ন ধরনের সংক্রমণের বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষা বেষ্টনী হিসেবে কাজ করে শ্লেষ্মা ঝিল্লি। শুষ্ক বাতাস এই বেষ্টনীকে দুর্বল করে দিতে পারে। ফলে শিশুদের শ্বাসকষ্ট হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়।
প্রতীকী ছবি: ফ্রীপিক
কুলার বা এসি ব্যবহারের সময় শিশুকে নিরাপদে রাখার উপায়
.শিশুর জন্য আরামদায়ক তাপমাত্রায় এসি চালানো
শুরু থেকেই এসির তাপমাত্রা ২৪ থেকে ২৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে এর মধ্যে রাখা আবশ্যক। এই তাপমাত্রা প্রচন্ড শীতলতা ছাড়াই শিশুর সংবেদনশীল শরীরকে উত্তাপ থেকে স্বস্তি দিতে যথেষ্ট। উষ্ণ দাবদাহ থেকে দ্রুত স্বস্তি পেতে কখনোই খুব কম তাপমাত্রায় এসি সেট করা যাবে না।
শিশুর ত্বকের সঠিক আর্দ্রতা বজায় রাখা
এসি থেকে নির্গত শুষ্ক বাতাসে শিশুর ত্বকের আর্দ্রতা রক্ষার্থে বেশ কিছু সফ্ট বেবি ক্রিম বা নিরাপদ ময়েশ্চারাইজার রয়েছে। এগুলো ব্যবহারে শিশুর কোমল ত্বক হাইড্রেটেড থাকে এবং এসির শুষ্কতা সরাসরি ত্বকে প্রভাব ফেলতে পারবে না।
শিশুকে আরামদায়ক পোশাক পরিয়ে রাখা
এই প্রয়োজনীয় বিষয়টি নিশ্চিত করতে বাতাস চলাচলকারী কটনের কাপড়গুলো বেছে নেওয়া যেতে পারে। এই পোশাক সহজেই ঘরের তাপমাত্রার সঙ্গে সামঞ্জস্য করতে পারে। অনেকক্ষণ এসি চলার কারণে শিশুর শরীরের তাপমাত্রা কমে গেলে অতিরিক্ত হালকা কাপড় বা চাদর যোগ করা যেতে পারে। তবে এখানে খেয়াল রাখতে হবে, তা যেন শিশুর অস্বস্তির কারণ হয়ে না দাঁড়ায়।
এসির সরাসরি বাতাস শিশুর দিক থেকে সরিয়ে রাখা
ঘরের যে অংশে শিশু থাকবে সেখানে এসি বা কুলারের বাতাস সরাসরি পড়া যাবে না। এ ক্ষেত্রে বায়ুপ্রবাহকে একদম উপরে সিলিংয়ের দিকে সেট করে রাখা উচিত। এতে ঠান্ডা বাতাস সরাসরি ঘরের মাঝে না পড়ে ধীরে ধীরে সমস্ত ঘর জুড়ে ছড়িয়ে পড়বে।
শিশুর শরীরের তাপমাত্রার প্রতি খেয়াল রাখা
এসি রুমে থাকার সময় কিছুক্ষণ পর পর শিশুর গায়ে আলতো হাত বুলিয়ে তার হাত, পা ও ঘাড় পরীক্ষা করা উচিত। শরীরে অল্প শীতলতা বা আর্দ্রতাকেও গুরুত্বের সঙ্গে নিতে হবে। ঠান্ডা হলে অতিরিক্ত হালকা কাপড় পড়াতে বা চাদর দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। অপরদিকে অল্প ঘাম হলে তোয়ালে দিয়ে তা মুছে দিয়ে কাপড় অপসারণ করা বা এসি অল্প কমিয়ে দেওয়া যায়।
দীর্ঘক্ষণ যাবত এসি বা কুলার চালু না রাখা
এসি বা কুলার একটানা অনেকক্ষণ না চালিয়ে ঘণ্টাখানেক পর পর বন্ধ করা উচিত। এর জন্য নির্দিষ্ট সময়ের জন্য টাইমার সেট করে দেওয়া যেতে পারে। এতে অতিরিক্ত ঠান্ডা না হয়ে ঘর জুড়ে একটি সুষম তাপমাত্রা বজায় থাকবে।
অ্যালার্জেন দূর করতে নিয়মিত এসি পরিষ্কার করুন
এসি থেকে নির্গত বাতাসকে জীবাণুমুক্ত রাখতে রুটিন মাফিক এসি পরিষ্কার করা অত্যাবশ্যক। সময়মত এসির ফিল্টারসহ অন্যান্য যন্ত্রাংশ পরিষ্কার করা হলে তাতে কোনো রকম অ্যালার্জেন জন্ম নেওয়ার আশঙ্কা থাকে না।
সঠিক আর্দ্রতা বজায় রাখার জন্য ঘরে ভেজা তোয়ালে রাখা
শিশুর ত্বকে লোশন বা ময়েশ্চারাইজার দেওয়ার পাশাপাশি অতিরিক্ত সুরক্ষা হিসেবে ঘরের আর্দ্রতাও বজায় রাখা জরুরি। এর জন্য ঘরের ভেতর একটি ভেজা তোয়ালে রাখা হলে তা এসির চালনার ফলে সৃষ্ট শুষ্কতা শুষে নিতে পারে। একই সঙ্গে ঘরের পরিবেশে ধীরে ধীরে আর্দ্রতা যুক্ত হতে পারে।
প্রতীকী ছবি: ফ্রীপিক
শেষাংশ
উপরোক্ত পন্থাগুলোর যথাযথ প্রয়োগ এসিতে শিশুর নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে। বিশেষ করে শিশুকে কোনোভাবেই তাপমাত্রার আকস্মিক পরিবর্তনের সান্নিধ্যে আনা যাবে না। কেবল সঠিক তাপমাত্রায় এসি চালানোই একমাত্র উপায় নয়। বরং এই তাপমাত্রায় এসি একটানা দীর্ঘ সময় না চালিয়ে তাতে বিরতি দেওয়া উচিত। সেই সঙ্গে ঘরের সঠিক আর্দ্রতা ধরে রাখাও সমানভাবে দরকারি। এসির বায়ুপ্রবাহকে জীবাণুমুক্ত রাখতে সময়মতো এসি পরিষ্কার করার দিকে আলাদা গুরুত্ব দিতে হবে। এসির শীতলতা বা শুষ্কতা থেকে শিশুর কোমল ত্বক বাঁচাতে আরামদায়ক কাপড় পরানো জরুরি। সর্বোপরি, এসিতে থাকার পুরো সময়টাতে শিশুর শরীরের প্রতি সতর্ক দৃষ্টি রাখা আবশ্যক।