এবারের নির্বাচনী প্রচারে অনেক অনেক নীতিগত প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ট্রাম্প। যদিও বেশির ভাগ সময় তিনি নিজের নীতি নিয়ে সুনির্দিষ্ট করে কিছু বলেননি। তিনি অন্য কোনো দেশের বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করা এবং বাণিজ্য সুরক্ষানীতির ওপর ভিত্তি করে অথবা তাঁর ‘আমেরিকা প্রথম’ নীতির ওপর ভিত্তি করে ওই সব প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
ট্রাম্প তাঁর নির্বাচনী প্রচারে ইউক্রেনের মতো মধ্যপ্রাচ্যে ‘শান্তি’ ফেরানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তিনি জিতলে গাজায় ইসরায়েল-হামাস এবং লেবাননে ইসরায়েল-হিজবুল্লাহ যুদ্ধ বন্ধ করবেন বলে জোর দাবি করেছেন। কিন্তু কীভাবে এ যুদ্ধ বন্ধ করবেন, সে বিষয়ে কোনো কিছু বলেননি।
বরং ট্রাম্প বারবার এটাই বলে গেছেন, যদি জোবাইডেনের পরিবর্তে তিনি ক্ষমতায় থাকতেন, তবে ইরানের ওপর তাঁর ‘সর্বোচ্চ চাপের’ কারণে হামাস ইসরায়েলে হামলাই চালাত না। হামাস ইরান–সমর্থিত গাজার ফিলিস্তিনিদের সশস্ত্র সংগঠন।
সার্বিকভাবে ইরান বিষয়ে ট্রাম্প সম্ভবত তাঁর পুরোনো কৌশলেই ফেরত আসবেন। যেমন তিনি ইরান পরমাণু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে দূরে রাখবেন। ইরানের বিরুদ্ধে বিস্তৃত নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবেন। ট্রাম্পের আমলেই ইরানের সবচেয়ে ক্ষমতাশালী সামরিক কমান্ডার জেনারেল কাসেম সোলাইমানিকে হত্যা করে যুক্তরাষ্ট্র।
বিগত সময়ে ক্ষমতায় থাকাকালে ট্রাম্প কট্টর ইসরায়েলপন্থী নীতিতে থেকেছেন। তিনি জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেন এবং তেল আবিব থেকে মার্কিন দূতাবাস সরিয়ে জেরুজালেমে নিয়ে যান।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ট্রাম্পকে ‘হোয়াইট হাউসে থাকা ইসরায়েলের সবচেয়ে ভালো বন্ধু’ বলে বর্ণনা করেছেন। ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য নীতি ওই অঞ্চলের বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি আরও উসকে দিতে পারে বলে আশঙ্কা সমালোচকদের।
ফিলিস্তিনিদের দাবি অগ্রাহ্য করে ট্রাম্প জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার পর ফিলিস্তিনিরা ট্রাম্প প্রশাসনকে বর্জন করেছিল।
শুধু জেরুজালেম প্রশ্নে নয়, বরং ‘আব্রাহাম অ্যাকর্ডস’ বা ‘আব্রাহাম চুক্তি’ করার সময়ও ফিলিস্তিনিদের দাবিকে সম্পূর্ণরূপে উপেক্ষা করে গেছেন ট্রাম্প।
আরব ও মুসলিম দেশগুলোর সঙ্গে ইসরায়েলের কূটনৈতিক সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে ট্রাম্পের উদ্যোগে ২০২০ সালের শেষে দিকে আব্রাহাম চুক্তি সই হয়। ওই চুক্তিতে ইসরায়েল ভবিষ্যৎ স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র মেনে নেবে কি না বা ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনিদের মধ্যে দীর্ঘদিনের সংকট নিরসনে যে দ্বিরাষ্ট্র সমাধান নীতি কথা বলা হয়, তা পুরোপুরি এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। নির্বাচনী প্রচারে ট্রাম্প অনেকবার বলেছেন, তিনি গাজা যুদ্ধের অবসান চান।
নেতানিয়াহুর সঙ্গে ট্রাম্পের সম্পর্ক বেশ জটিল, কখনো কখনো তা অকার্যকরও। তবে নিশ্চিতভাবেই নেতানিয়াহুর ওপর চাপ সৃষ্টি করার ক্ষমতা ট্রাম্পের আছে। গুরুত্বপূর্ণ আরব দেশগুলোর প্রভাবশালী নেতাদের সঙ্গে ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকার ইতিহাসও আছে। ওই সব দেশের সঙ্গে হামাসের সম্পর্ক রয়েছে।
এখন দেখার বিষয় ট্রাম্প কীভাবে একসঙ্গে ইসরায়েলের প্রতি তাঁর দৃঢ় সমর্থন প্রদর্শন এবং গাজা যুদ্ধের অবসানের চেষ্টা করেন। এ নিয়ে স্পষ্ট করে কোনো কথা এখন পর্যন্ত তিনি বলেননি।